বরফাচ্ছন্ন কানাডার ক্যালগেরিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গোৎসব শুরু হয়ে গেল আজ “আমরা সবাই”-এর এক দিনব্যাপী ভার্চুয়াল পূজার মাধ্যমে। ১১ থেকে ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত ক্যাল্গেরির বাংলাদেশ পূজা পরিষদ দেবীর আরাধনা করছে পঞ্জিকার তিথী অনুযায়ী। সব শেষে বঙ্গীয় পরিষদ, ক্যাল্গেরি ১৫ থেকে ১৭ই অক্টোবর মন্দির থেকে আনন্দময়ী মা দুর্গার পূজা সরাসরি সম্প্রচার করবে।
করোনাকালে এবারের আয়োজনে শুধু মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সব আয়োজন। বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের ইচ্ছা থাকলেও এবার পূজা মন্দিরে আসতে পারছেন না। ভক্তের সংখ্যানুপাতে একাধিকবার পুষ্পাঞ্জলি এবং অনলাইনে পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এবার দুর্গাপূজায় স্বাস্থ্যবিধি ও গাইডলাইন পূর্ণার্থীদের মেনে চলতে হবে। মন্দির প্রাঙ্গণে নারী-পুরুষের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা ও নির্দিষ্ট থাকবে। প্রবেশকালে ডাবল ভ্যাকসিনেশনের সনদপত্র দেখাতে হবে। পূজামণ্ডপে আসা সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও ভক্তবৃন্দকে নির্দিষ্ট দূরত্ব (কমপক্ষে দুই মিটার) বজায় রেখে লাইন ধরে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রণাম শেষে বের হয়ে যেতে হবে।
এছাড়াও মন্দিরের প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা থাকবে। গত বছরের মতো এ বছরও আলোকউজ্জ্বল আর সূক্ষ্ণ ছোঁয়ায় সাজানো হবে না পূজামণ্ডপ। নানা মাত্রিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে চলবে দেবী দুর্গার আরাধনা। তবে একে অন্যের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে পূজামণ্ডপে নেয়া হবে বিশেষ সতর্কতা। সেই মিলনমেলা মূলত হবে ভার্চুয়ালি।
ক্যালগেরির প্রবাসী বাঙালী জয়দীপ স্যানাল জানালেন- বৈশ্বিক করোনা থেকে সারা বিশ্ব মুক্ত হয়ে নতুন করে জেগে উঠুক প্রাণ-মায়ের কাছে এটাই আমাদের প্রধান প্রার্থনা। বিশ্ববাসীর সুখ ও শান্তি কামনা করছি।
ক্যালগেরির ‘আমরা সবাই’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রুপক দত্ত বলেন: আসছে শুভ দিনে মায়ের আশীর্বাদে দেশে ও বিশ্বের মধ্যে শান্তি বিরাজ করবে, আগামী দিনগুলো আরো সুন্দর হয়ে উঠবে, করোনাসহ সকল পাপ ও পঙ্কিলতা দূর হয়ে মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ক্যালগেরি বঙ্গীয় পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি কিরণ বণিক শংকর বলেন, সকল ধর্মীয় রীতি মেনেই পুজো হবে। তবে তিনি বলেন, ‘উৎসবের নামে সুইসাইড’ করার কোন অর্থ নাই। পূজার আয়োজকরা আশা করছি এই ধরনের অবিবেচক সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবেন। বিশ্ব জননী তিনি সংকট নাশিনী, তিনিই সকল সংকট নাশ করে আবারও ধরাতে স্বাভাবিক জীবন ও পুজোর পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন।
বাংলাদেশ পূজা পরিষদ অব ক্যালগেরির এক্সকিউটিভ কমিটির সদস্য প্রকৌশলী সুব্রত বৈরাগী বলেন, দুর্গতি বিনাশ করার জন্য তার আবির্ভাব। তাই দেবির নামকরণ ‘দুর্গা’। আমরা বিশ্বাস করি দেবী সর্বত্র আছেন, মঙ্গলের বার্তা দিয়ে তিনি পৃথিবীকে শান্তিময় করে তুলবেন।
দেশের মাটিতে পা রাখতে না পারলেও কানাডায় সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রবাসী বাঙ্গালিরা দুর্গাপূজাকে ঘিরে মেতে উঠবেন আনন্দ উৎসবে। দেবীর পায়ে অঞ্জলি আর দর্শনের পাশাপাশি বিশ্ববাসীর সুখ ও শান্তি কামনা করে করবেন প্রার্থনা।
উল্লেখ্য, কানাডার অন্যান্য প্রদেশেও স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে নেয়া হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব এর প্রস্তুতি। তাছাড়া নব প্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় সত্ত্বাকে তুুলে ধরতে অনেকেই উদযাপন করবেন ভার্চুয়াল পূজা।